সবার কথা বলি

ধনী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার পাওনা

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন

ধনী দেশগুলোর কাছে ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার পাওনা থেকেও বিদেশি ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশ।

ধনী ও জলবায়ু দূষণকারী দেশগুলোর থেকে ক্ষতিপূরণ বাবাদ বাংলাদেশ ৫.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ান রয়েছে। অথচ সেই অর্থ পরিশোধ না করে উল্টো উন্নয়নের নামে প্রায় ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশকে জর্জরিত করছে উন্নত দেশগুলো। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড এর প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে জরুরি ভিত্তিতে এই বিদেশি ঋণ প্রত্যাহারের আহ্বান এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।IMG 20250216 202623

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ‘হু ওজ হু’ নামের এই বিশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনের সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০২৪ সালে বিশ্বের ৫৪টি নিম্ন আয়ের দেশ বিদেশি ঋণের ফাঁদে জর্জরিত। দেশগুলো জাতীয় উন্নয়ন বিসর্জনের বিনিময়ে ধনী দেশগুলোর কাছে পরিশোধ করেছে ১৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, জলবায়ু দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর কাছে ১০৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণী ধনী দেশগুলো। যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণ ১.৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি। সমীক্ষায় ৭০টিরও বেশি দেশের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-

বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
• বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
• ১৯৯২ সাল থেকে নিঃসরণ (২০১০ সালের মার্কিন ডলার সমতুল্যে) বিবেচনায়, ধনী দেশগুলির কাছ থেকে নিম্ন পরিসরের অনুমান অনুযায়ী ৫.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ঋণ পাওনা রয়েছে বাংলাদেশের।
• মধ্য পরিসরের অনুমান অনুযায়ী (১৯৬০ সাল থেকে) এর পরিমাণ ৭.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার
• ২০২৩ সালে সবমিলে ৪.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ
• ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্বের ১৬.৯ শতাংশ অর্থ গিয়েছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পেছনে যেখানে দেশের স্বাস্থ্যখাতে শুধু ৩.০৮ শতাংশ এবং শিক্ষাখাতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১১.৭৩ শতাংশ।

একশনএইড-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ধনী দেশগুলি, বেসরকারি ঋণদাতা এবং বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জলবায়ু কর্মসূচি সহ অপরিহার্য সরকারি সেবাসমূহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

এদিকে, ধনী দেশগুলি জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশকে ৫.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “নতুন প্রতিবেদনটিতে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিদেশি ঋণের ফাঁদের চিত্র ফুটে উঠেছে। ধনী দেশগুলোর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।” ঋণ সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ প্রত্যাহার এবং ঔপনিবেসিক ঋণ কাঠামো থেকে মুক্তির আহ্বান জানান তিনি। ফারাহ্ কবির যোগ করেন, ‘এই বছর ঋণ মওকুফে নতুন জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের জন্য চাপ দিতে হবে বৈশ্বিক দক্ষিণকে’।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশেষ করে দেশের নারী ও মেয়েদের ওপর পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা বারবার দেখেছি কীভাবে নারী ও মেয়েরা জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু দূষণকারী ধনী দেশগুলো জলবায়ু ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশমন ও অভিযোজনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান

প্রতিবেদনে বিশ্ব নেতাদের কাছে ঋণ নিয়ে নতুন জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন প্রতিষ্ঠায় প্রাধান্য দেওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাহারে সকলের ঐক্য প্রচেষ্টা ও দাবি জানানো হয়।

NM/AN

Get real time updates directly on you device, subscribe now.