সবার কথা বলি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে

“ইদানীং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, অনেকে মনে করছে এই প্ল্যাটফর্ম বিলুপ্ত” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী আজ চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, আমি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কারো একক নেতৃত্বে হয়নি। যখন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা অনেকটা আপোষের দিকে যাচ্ছিল, তখন আমরা চট্টগ্রাম থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলাম, আমরা লাশের উপর দিয়ে আপোষ করতে পারব না, প্রয়োজনে ঢাকাকে বাদ দিয়ে আমরা আন্দোলন চালাব।

তাছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থাকবে কি থাকবে না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো আমরা অনেকেই আছি, যারা নতুন রাজনৈতিক দলে যাইনি। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে খুব শীঘ্রই নতুন করে ঢেলে সাজাব এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অসম্পূর্ণ কাজগুলো, যেমন আন্দোলনকারীদের মামলা নিষ্পত্তি, আহত-নিহত পরিবারের পুনর্বাসন, গণহত্যা কারীদের বিচারের জন্য কাজ করব। অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের পর যেভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের আলোচনা সমালোচনা করেছি, তেমনি গণ-অভ্যুত্থানের উপর দাঁড়ানো দলের আলোচনা এবং সমালোচনাও করব। তরুণদের রাজনীতিতে আসার যে নতুন সুগম পথ তৈরি করে দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল, তার জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের স্বাগত জানাই, আমাদের প্রত্যাশা তাদের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম জোনের নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, সদস্যসচিব হোসাইন মাসুম, মুখ্য সংগঠক রুবায়েত সম্রাট ও মুখপাত্র তানিয়া আক্তারসহ অন্যান্য সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুলাই মাসের চেতনাকে ধারণ করে এই কমিটি ন্যায়বিচার ও সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করবে। শিক্ষার্থীরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় এবং তাদের ন্যায্য অধিকার পায়, সে লক্ষ্যে এই কমিটি সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাঈম, চৌধুরী সিয়াম এলাহী এবং রিদুয়ান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কমিটির সদস্যদের সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং কমিটির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, এই কমিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক রিদুয়ান সিদ্দিকী বলেন, “আন্দোলনের মাঝামাঝি সময়ে যখন সব স্থানে পুলিশ র‍্যাব যৌথভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করছিল, তখন ঢাকায় রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা এবং সিলেট ও চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের হাল ধরেছিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাদের শেখ হাসিনা রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন, এখন তারা কথা বলতে শিখেছে।

সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই বিপ্লবের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা, মুজিববাদী আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করা এবং গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সমুন্নত রাখতে একটি সার্বজনীন ব্যানার হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহাত্ম্য বজায় রাখা হবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাঈম বলেন, “সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কোনো প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি জুলাইয়ের ২০ তারিখেই আমাদের আহ্বায়ক মঞ্জু ভাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত হয় এবং এতে ৩৫ জন সদস্য ছিল। সুতরাং, জুলাইয়ের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে একক সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারবে না। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর নবগঠিত কমিটির সবাই আপনাদের সামনে হাজির হয়েছে এবং তাদের কর্মপরিকল্পনা আপনাদের জানিয়েছেন। আশা রাখছি তাদের হাত ধরে জুলাইয়ের অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হবে।”

এতে আরও বক্তব্য রাখেন নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, “জুলাই কারো একার না, জুলাই কারো বাবারও না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসী ছাড়া কারো অবদানকে ছোট করে দেখার কোনোভাবেই সুযোগ নেই। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী দেখা গেছে আন্দোলনের অন্যতম স্টেকহোল্ডার প্রাইভেটিয়ান, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অনেক দিক থেকে মাইনাস করার পাঁয়তারা করছে। অথচ আমরা আমাদের ভাইদের রক্ত দেখে বসে না থেকে প্রাইভেট পাবলিক সবাই একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন সফল করি। এখন কেন বেসরকারি, মাদ্রাসা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক বলে আড়চোখে দেখবে? আমাদের কথা হবে চোখে চোখ রেখে, কাজ হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কেউ দাদাগিরি করতে আসলে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা।

আমাদের এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি কাজ করবে জুলাই স্পিরিট ধারণ করে। কাজ করবে জুলাই আকাঙ্ক্ষা পূরণে। হাসিনার ফ্যাসিবাদী সময় থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত যত গুম, খুন, ধর্ষণ, হত্যা হয়েছে, সব কিছুর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই করব। আমরা কাজ করব আমাদের নিহত ও আহত সহযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে। এবং আমাদের আরও কাজ হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে।”

নবনিযুক্ত সদস্য সচিব হোসাইন মাসুম বলেন, “জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সবখানে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা নতুন কমিটির পক্ষ থেকে এই বৈষম্যের অবসান চাই।”

মুখপাত্র তানিয়া আক্তার বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে যেসব বিপ্লবীদের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, তাদের অচিরেই মামলা থেকে খালাস দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা আহত হয়েছিল, তাদের চিকিৎসার বিষয়টি দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।”

এখানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নতুন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম সোহাগ, সহ-মুখপাত্র হুরাইন হুরে, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় এর আহবায়ক মুহাম্মদ রাফিউসহ প্রমুখ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম জোনের নবগঠিত কমিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বদ্ধপরিকর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.