ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের সেঞ্চুরি

১৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙলেন হৃদয়-জাকের

বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের নাম ‘নতুন বল’। দুবাইয়ের স্লো উইকেটেও নতুন বলে ভারতীয় পেসারদের সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। সৌম্য সরকার-নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যর্থতায় শুরুতেই পথ হারায় বাংলাদেশ। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা যখন খাদের কিনারায় তখন শক্ত হাতে হাল ধরেন তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলি। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়ে জাকের ফিরলেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন হৃদয়। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচের শুরুতেই দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ইতিহাসগড়া একটি জুটি বেধেছেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলি অনিক। ১৫৪ রানের জুটিতে তারা দুটি রেকর্ড গড়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়েছিল ১৯ বছর আগে। যা আজ নিজেদের দখলে নিয়েছেন হৃদয়-জাকের।

দুবাইয়ে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৪ বলে ২২৮ রান তুলে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০০ রান করেছেন হৃদয়। তাছাড়া ফিফটি পেয়েছেন জাকের। ভারতের হয়ে ৫৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ শামি।

ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সৌম্য সরকারকে হারায় টাইগাররা। ইনফর্ম এই ব্যাটার ৫ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। মোহাম্মদ শামির করা ওভারের শেষ বলটি অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে ছিল। সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি। ব্যাটের ভেতরের দিকের কানায় লেগে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে।

প্রথম ওভারেই উইকেট হারানো বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল তিনে নামা শান্তর দিকে। তবে হতাশ করেছেন অধিনায়ক। সৌম্যের পথ ধরেই ডাক খেয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই সাফল্য পেয়েছেন হারষিত রানা। চতুর্থ বলটি আউটসুইং করেছিলেন এই পেসার, সেখানে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কভারে বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন শান্ত।

২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তানজিদ তামিম। তবে চারে নেমে সুবিধা করতে পারলেন না মিরাজ। শামির করা সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে আরো বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় কাট করতে গিয়ে স্লিপে শুবমান গিলের হাতে ধরা পড়েন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে ১০ বলে ৫ রান করেছেন তিনি।

অষ্টম ওভারে প্রথমবারের মতো স্পিন আক্রমণে যান রোহিত শর্মা। অক্ষর প্যাটেলের করা ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে সামান্য টার্ন করে বের হয়ে যাওয়ার সময় ড্রাইভ করতে যান তামিম। টাইমিং না হওয়ায় ব্যাটের কানা ছুঁয়ে রাহুলের হাতে ধরা পড়েন। ২৫ বলে ২৫ রান করেছেন এই ওপেনার।

তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের কাঁধে তখন পাহাড়সম দায়িত্ব। তবে মুশফিক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেন। নিজের খেলা প্রথম বলেই ডিফেন্স করতে গিয়ে এজ হয়ে রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন তিনি।

হ্যাটট্রিক বলটিও একই জায়গায় করেছিলেন অক্ষর। সেখানে মুশফিকের আউটের পুনরাবৃত্তি হতে পারতো আরেকবার। তবে রোহিত শর্মার কল্যাণে বেঁচে যান জাকের। তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিতের হাতে, সহজ ক্যাচ রাখতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। ফলে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন অক্ষর।

৩৫ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। দলের এমন বিপর্যয়ে হাল ধরেন জাকের আলি ও তাওহিদ হৃদয়। এই দুজনে মিলে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১৫৪ রান যোগ করেছেন। যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেকোনো দলের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তাছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও এটি।

জাকের ৬৮ রান করে ফেরায় ভাঙে সেই রেকর্ড জুটি। এরপর উইকেটে এসে দুর্দান্ত এক ক্যামিওতে স্বপ্ন দেখান রিশাদ হোসেন। তবে ১২ বলে ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। রিশাদের পর তানজিম সাকিবও দ্রুত ফিরলে আবারো অলআউটের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।

তবে তখনও এক প্রান্তে হৃদয় থাকায় কিছুটা হলেও আশা বেঁচে ছিল। তবে তার পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ায় সেই আশাও ক্ষীন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ব্যথা নিয়েই ব্যাটিং করেছেন এবং সেঞ্চুরিও স্পর্শ করেছেন। সবমিলিয়ে ১১৪ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন তিনি। শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ১১৮ বলে ১০০ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।

 

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে দুবাইতে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারত। যেখানে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তবে তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলি অনিকের ইতিহাসগড়া ব্যাটিং তাদের বিব্রতকর স্কোরবোর্ড থেকে মুক্তি দিয়েছে। বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার আগে করেছে ২২৮ রান। সবমিলিয়ে প্রথম ইনিংসে বেশ কয়েকটি রেকর্ডও হয়েছে।

এদিন (বৃহস্পতিবার) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন হৃদয়। যদিও ক্র্যাম্প নিয়ে শেষদিকে বেশ বড় একটা সময় তাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলতে হয়েছে। যদিও তিনিই প্রথম নন। এমন কীর্তি আছে বাংলাদেশের আরও এক ব্যাটারের। এ ছাড়া ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি ৫ উইকেট শিকারের পথে দ্রুততম ২০০ উইকেট এবং বিরাট কোহলি ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছেন।

বাংলাদেশ-ভারতের প্রথম ইনিংসে যত রেকর্ড
১০০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন হৃদয়। এর আগে প্রথম ওই রেকর্ড ছিল তামিম ইকবালের। সবমিলিয়ে হৃদয় নবম ক্রিকেটার হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় নিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। এ ছাড়া নন-ওপেনার হিসেবে তিনি দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান।

এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে পাঁচজন সেঞ্চুরি পেয়েছেন। হৃদয়ের আগে একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন– তামিম, সাকিব আল হাসান, শাহরিয়ার নাফিস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

১৫৪
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ বা তার নিচের উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ ১৩১ রানের রেকর্ড হয়েছিল ১৯ বছর আগে। যা আজ নিজেদের দখলে নিয়েছেন হৃদয়-জাকের। একই উইকেটে এটি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেকোনো দলেরই রেকর্ড জুটি।

ইতিহাসগড়া জুটির পথে হৃদয়-জাকের দুজনই ফিফটি পেয়েছেন। জাভেদ ওমর বেলিম (২০০০), সাকিব আল হাসান (২০০৬), তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের (২০১৭) পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিষেকে ফিফটি করলেন হৃদয়-জাকের। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৭ বা এরপর নেমে ভারতের বিপক্ষে প্রথম এশিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে জাকের ফিফটির রেকর্ড গড়েন।

১৫৬
ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ (ফিল্ডার হিসেবে) ১৫৬টি ক্যাচের রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। তার সমান উইকেট নিয়েছেন সাবেক তারকা মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। এ ছাড়া শচীন টেন্ডুলকার ১৪০, রাহুল দ্রাবিড় ১২৪ ও সুরেশ রায়না ওয়ানডেতে ১০২টি ক্যাচ নিয়েছেন।

৬০
ভারতের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এখন শামি। ডানহাতি এই পেসারের শিকার ৬০ উইকেট। এতদিন জহির খান বিশ্বকাপ-চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দেশটির হয়ে সর্বোচ্চ ৫৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন। এ ছাড়া জাভাগাল শ্রীনাথ ৪৭ ও রবীন্দ্র জাদেজা নিয়েছেন ৪৩ উইকেট।


ভারতের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উইকেটের ফাইফার পূর্ণ করেছেন শামি। সেরা বোলিং ফিগারেও (৫৩/৫) তার অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষে থাকা জাদেজার ২০১৩ আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোলিং ফিগার ছিল ৩৬/৫।

২০০
ম্যাচের হিসাবে ওয়ানডেতে উইকেট শিকারে দ্বিতীয় দ্রুততম ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ করেছেন শামি। তার সমান ১০৪ ম্যাচে ২০০ উইকেটের মাইলফলক পূর্ণ করেন পাক কিংবদন্তি সাকলাইন মুশতাক। এ ছাড়া ১০২ ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট নিয়ে এই কীর্তিতে শীর্ষে মিচেল স্টার্ক।

তবে বলের হিসাবে শামি সবচেয়ে দ্রুততম। ৫১২৬ ডেলিভারিতে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট শিকার করেছেন এই ভারতীয় পেসার। দুইয়ে থাকা স্টার্ক এই কীর্তি গড়তে করেছেন ৫২৪০ বল। আর সাকলাইন ‍মুশতাক করেন ৫৪৫১ বল।

Comments (০)
Add Comment