চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর হাউজিং এস্টেটে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) ফ্ল্যাট নিজ নামে বরাদ্দের আবেদন করেন সগীর আহমেদ রানা। জাগৃকের বোর্ড সভায় বরাদ্দের সিদ্ধান্তের পর ফ্ল্যাটও বুঝে পান তিনি। তবে কোনো ভাড়া কিংবা কিস্তির টাকাই দেননি! তৎকালীন ‘পাওয়ারফুল’ নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজশে টানা আট বছর ফ্ল্যাটে থেকেছেন তিনি। অথচ এই সময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিল ভাড়ার ২১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। আর এই টাকা মেরে দুদকের মামলার জালে এবার ওই সাবেক প্রকৌশলীসহ ফ্ল্যাটের দখলদার।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক ইমরান খান অপু বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন—জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অবরপ্রাপ্ত) মো. শামসুল ইসলাম (৬১) এবং নগরের হালিশহর হাউজিং এস্টেটের জি ব্লকের হাজী সগীর আহমেদ রানা (৪৬)।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল হাজী সগীর আহমেদ রানা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ১০৮টি ফ্ল্যাট প্রকল্পের অবরাদ্দকৃত ৪টি ফ্ল্যাট থেকে একটি ফ্ল্যাট তার নামে বরাদ্দের আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২ জুলাই ১৪৪ তম বোর্ড সভায় সংরক্ষিত কোটায় সগীর আহমেদের নামে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। আসামি শামসুল আলম একইবছরের ২৭ জুলাই বরাদ্দপত্র প্রদান করেন। ফ্ল্যাট প্রদানের বিপরীতে শামসুল আলম বরাদ্দপত্রের শর্ত না মেনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিস্তির টাকা পরিশোধ ছাড়াই ফ্ল্যাট প্রদান করেন। ছগীর আহমেদ একইবছরের ২১ অক্টোবর ফ্ল্যাটের দখল বুঝে নিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অবৈধভাবে বসবাস করে এসেছেন।
২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাগ্রকের পরিমাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটের মোট ভাড়া ২১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭২ টাকা। আর এই পুরো টাকাটাই রাষ্ট্রীয় কোষাগাড়ে জমা হওয়ার কথা ছিল। যদিও জাগৃকের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম টাকা গ্রহণ ছাড়াই ফ্ল্যাটটি ছগীর আহমেদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম। তিনি জানান, চট্টগ্রামের হালিশহর হাউজিং এস্টেটের জি ব্লকে ১০৮ টি আবাসিক ফ্ল্যাট প্রকল্পে জাগৃকের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম এবং বরাদ্দ গ্রহীতা সগীর আহমেদ পরষ্পর যোগসাজশে ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদ ২১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সজেকা-১-এ একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা তদন্তকালে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা-ও আমলে নেওয়া হবে।